Monday, August 8, 2011

Eid's || jewelry

Photobucket

এবারের ঈদে লম্বা কামিজ বেশ জাঁকিয়ে এসেছে। দর্জি বাড়ি কিংবা ফ্যাশন হাউস—সব জায়গাতেই লম্বা কামিজের জয়জয়কার। বাজার ঘুরে দেখে এলাম, এই লম্বা কামিজের সঙ্গী হচ্ছে লম্বা লম্বা কানের দুল। সোনা, রুপা, ব্রাসো, কাঠ, কড়ি, পুঁতি উপাদান যা-ই হোক, ফ্যাশন কিন্তু একটাই—লম্বা দুল। এতই লম্বা যে কান থেকে শুরু হয়ে এই দুল শেষ হবে প্রায় কাঁধে এসে। কানের দুল, গলার মালা বা গয়না, যা-ই বলি না কেন, কয়েক পরতের ডিজাইন অথবা একটু বড় ডিজাইন—এই হলো এবারের ঈদে গয়নার ফ্যাশন। কানের দুলে যেমন থাকছে লম্বাটে ভাব, তেমনি গলার গয়না হতে পারে ছড়ানো, লম্বাটে লকেট অথবা তিন, পাঁচ, সাত লহরের মালা। হাতে ব্যাঙ্গেলস বা বালার ব্যবহার তো এখন হাই-ফ্যাশন। শুধু এক রঙের একটি বালাতেই হবে না, চাই তিন-চার রকমের, তিন-চার রঙের বালা।
এবারের ঈদ ফ্যাশনে গয়না হবে মূলত দুই ধারার। ফ্যাশন বা কস্টিউম গয়না এবং গতানুগতিক গয়না—জানালেন ফ্যাশন ডিজাইনার মাহিন খান। তাঁর কাছ থেকে জানা গেল, ফ্যাশন গয়নায় এবার থাকছে বিভিন্ন ধরনের উপাদান।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পাবে ব্রাসো, ইমিটেশন, কাঠ, কড়ি, পুঁতি, সুতা, শেল ও সিরামিক। এই বিভিন্ন উপাদানে তৈরি ফ্যাশন-গয়নায় থাকবে রঙের বৈচিত্র্য, অনেক রঙের সমন্বয়—এই হলো ফ্যাশন গয়নার মূল থিম। একটু লক্ষ করলে দেখা যাবে, মূলত আদিবাসী রং মাথায় রেখেই সবাই এ ধরনের গয়নার নকশা করছেন। তবে রং বা নকশা যা-ই হোক না কেন, এই গয়নায়ও প্রাধান্য পাবে বড় এবং লম্বাটে আকৃতি। কানের দুল যেমন হবে অনেক বড়, তেমনিভাবে গলার মালাতেও থাকবে কয়েকটি লহর। দেখা যাবে মালায় বিভিন্ন ধরনের পুঁতি ব্যবহার করলেও মালার এক পাশে বিশেষ নকশা থাকবে। হয়তো একটু বড় পাথর অথবা লক্ষণীয় কোনো নকশা। গোল নকশা বা নকশায় রিংয়ের প্রভাব লক্ষ করা যাবে। আড়ংয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা তাসনিম হোসেইন জানালেন, তাঁদের গয়নাতেও এবার তাঁরা প্রাধান্য দিয়েছেন একটু বড় ডিজাইন। একটির সঙ্গে আরেকটি উপাদান মিলিয়ে তৈরি করা হয়েছে কানের দুল ও গলার গয়না। তাসনিম বলেন, ‘আড়ংয়ের এবারের গয়নাসম্ভারে প্রতিটি গয়নাই স্বতন্ত্র নকশার। পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে হয়তো একটি কানের দুল পরলেই পরিপূর্ণতা পাবে সাজ। উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে আড়ংয়ের ফ্যাশন জুয়েলারিতে। ব্যবহার করা হয়েছে ব্রাসো, সিরামিক, কাঠ, সুতা, পুঁতি, কড়ি, রুদ্রাক্ষ। আর বিশেষভাবে ব্রাসোতে খোদাই করা কাজ, যা ‘ছিলার কাজ’ নামে পরিচিত তা বেশ প্রাধান্য পেয়েছে। রুপার কানের দুলে বরফি, চার কোনা, গোল—এই ধরনের আকৃতি প্রাধান্য পেয়েছে। সোনার গয়নায় মেশানো হয়েছে পুঁতি ও পাথর।’

Photobucket

গতানুগতিক ধারার গয়নায় মিশ্রণের পরিবর্তন এসেছে। সোনা ও রুপা বা হলদে এবং সাদা সোনার সমন্বয়ে নকশা করা হয়েছে এ ধরনের গয়নায়। মাহিন খানের কাছ থেকে জানা গেল সাদা ও হলদে সোনার পাশাপাশি রোজ গোল্ড বা গোলাপি সোনার প্রাধান্যও দেখা যাবে প্রচলিত গয়নায়। আর প্রচলিত গয়নায় থাকছে মোগল আমলের নকশা। যেকোনো গয়নায়ই পাথরের ব্যবহার লক্ষণীয়। সোনা বা রুপার গয়নায় পাথরের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে পলকি ও কুন্দন। সেই সঙ্গে রুবি, পান্না, সোনালি টোপাজও রয়েছে ক্রেতাদের পছন্দের তালিকায়। মায়াসীর এবারও গোল্ড প্লেটেড রুপার গয়না এনেছে। বিভিন্ন দামি পাথরের পাশাপাশি মুক্তোর ব্যবহারও করা হয়েছে এসব গয়নায়।
প্রচলিত ধাঁচেও ফ্যাশন হাউসগুলো তৈরি করছে ফ্যাশন-গয়না। ফ্যাশন হাউস পিরানের হোসনা বানু জানালেন, তাঁরা ব্রাসোর গয়নায় গিনির নকশা করেছেন। অনেকটা পয়সার মতো আকৃতির এই নকশাকে পুরোনো আমলে গিনির নকশা বলা হতো। তামাটে বা অক্সি রঙে থাকলেও অনেক বেশি প্রাধান্য পেয়েছে ব্রাসোতে সোনালি রঙের গয়না। কানের দুলেও ঝুলানো নকশার গয়না বেশি দেখা যাচ্ছে।
উপাদান যা-ই হোক, ব্রাসো কিংবা সোনা—এগুলো হবে রত্নখচিত। কখনো দামি পাথর আবার কখনো ফ্যাশন পাথরই হবে এবারের ফ্যাশনের ধারা। সব সময়ের মতো এবারের ঈদ গয়নাতেও অনেক বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে গোল্ড প্লেটেড গয়না। অ্যারাবিয়ানসের ব্যবস্থাপক সন ৎ হাজরা জানালেন, এবারের ঈদের গয়নার বেশির ভাগ নকশাই পুরোনো আমলের। অনেকটা মোগল সময়ের নকশা। আর এই নকশায় প্রাধান্য রয়েছে সোনালির পাশাপাশি কপার বা অ্যান্টিক রঙের। পাথরের ক্ষেত্রে পলকি কুন্দনের পাশাপাশি থাকছে ডায়মন্ড ডাস্টের ব্যবহার।
কস্টিউম বা ফ্যাশন জুয়েলারির ক্ষেত্রে কমলা, মিষ্টি গোলাপি ও হলুদ—এই ধরনের সব রং ফ্যাশন বলে জানালেন মাহিন খান। মালা বা দুলের পাশাপাশি হাতের বালা ও আংটিও এবারের ফ্যাশন ট্রেন্ড। পাথরের ক্ষেত্রে সব সময়ের মতো এবারও প্রাধান্য পাবে গার্নেট। প্রচলিত গয়নার ক্ষেত্রে সাদা, সোনালি ও গোলাপি বা হোয়াইট, ইয়েলো এবং রোজ গোল্ডই মাতিয়ে রাখবে ক্রেতাদের। অতএব এবারের গয়নায় একদিকে যেমন থাকবে রঙের দাপট, অন্যদিকে কয়েকটি মেটাল রঙের ব্যবহারে পাওয়া যাবে স্নিগ্ধ ভাব।
কস্টিউম বা প্রচলিত ধারার এ গয়নাগুলো কিনতে পাওয়া যাবে ফ্যাশন হাউস আড়ং, মায়াসীর, পিরান, মাদুলি, বনজ বর্ণালী, যাত্রা, দেশাল, অ্যারাবিয়ানস, গয়না ঘর, জেমস গ্যালারি ও মমতে। এ ছাড়া বড় সুপার মলগুলোতেও রয়েছে এ ধরনের গয়নার সম্ভার।

Photobucket

সোনা-হীরা
ঈদ এলেই সোনা কিনতে হবে। এমন ধারণা এখন অনেকের মধ্যেই কমতে শুরু করেছে। এর একমাত্র কারণ সোনার দামের ক্রমশ ঊর্ধ্বগতি। বাজারে এখন সোনার আনুমানিক দাম ১৮ ক্যারেট ৪৭ হাজার টাকা, ২১ ক্যারেট ৫০ হাজার টাকা ও ২২ ক্যারেট ৫২ হাজার টাকা। তার পরও সোনার গয়নার চাহিদা লক্ষ করা যায় ঈদ এলেই। এবারের ঈদেও তাই সোনার নকশায় পুরোনোর ছোঁয়া এসেছে। সেই সঙ্গে শুধুই হলদে সোনা নয় বরং সাদা ও গোলাপি সোনারও প্রাধান্য রয়েছে। সোনার গয়নায় মুক্তো ব্যবহার হচ্ছে সব সময়ের মতোই। তবে সোনার গয়নায় হাই-ফ্যাশন এখন পলকি ও কুন্দনের।
হীরার গয়নাও কয়েক বছর ধরে নজর কেড়েছে বাঙালির। ছোট ছোট নকশার হীরার গয়না এখন ক্রেতাদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে। হীরার গয়নার ক্ষেত্রে নাকফুলের দাম শুরু সাত হাজার টাকা থেকে। কানের দুল ২৫ হাজার, লকেট ২০ হাজার এবং পুরো সেট লাখ টাকার কিছু কম বা বেশি হবে। হীরার গয়না পাওয়া যাবে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড, ডায়া গোল্ড, জড়োয়া হাউসের মতো গয়নার দোকানগুলোয়।

No comments:

Post a Comment